Breaking News
recent

হ্যাকিং গ্রুপ এ্যানোনিমাসের শীর্ষ সদস্যরা গ্রেফতার হলেন যেভাবে

হ্যাকিং গ্রুপ এ্যানোনিমাসের শীর্ষ সদস্যরা গ্রেফতার হলেন যেভাবে

কিছুদিন আগেই আপনারা শুনেছেন, কম্পিউটার হ্যাকিং এ বিশ্বখ্যাত দল এ্যনোনিমাস(Anonymous) ও লুজসেক(LulzSec) এর শীর্ষ সদস্যরা দুই মহাদেশ থেকে গ্রেফতার হয়েছে।আর এর নেপথ্যে রয়েছে তাদেরই দলনেতা। যে কিনা পৃথিবীর কম্পিউটার জগতে এক ধ্বংসাতক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।







বিশ্বাসঘাতক এই দলনতা তার দলের সদস্যদের চমকে দিয়েছে। দুই সন্তানের জনক ২৮ বছর বয়সী এই দলনেতার নাম হেক্টর জাভিয়ার মুনসেগার (Hector Xavier Monsegur) । সে পাঁচ সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দিতো যারা বর্তমানে সবাই নিউইয়কের আদালতে অভিযুক্ত। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, গত জুনে সে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কতৃপক্ষের সাথে কাজ করছে দলের শীর্ষ হ্যাকারদের ধরার জন্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্দেহভাজন পাঁচ লুজসেক সদস্যদের মধ্যে দুইজন গ্রেট ব্রিটেন, দুইজন আয়ারল্যাণ্ড এবং একজন এ্যনোনিমাসের আমেরিকান সদস্য জেরিমি হেমন্ড। এদের তিনজনকে গ্রেফতার এবং দুইজনকে চক্রান্তের অভিযোগে চার্জ করা হয়েছে।- ফস্ক নিউজ।
এফ বি আই এর এক সদস্য ফস্ক নিজউকে জানায়, ‘এটি হ্যাকিং গ্রুপের জন্য বিধ্বংসী অবস্থা। আমরা লুজসেক গ্রুপের প্রধানকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছি।’
তাদের হ্যাক করা সাইটগুলো পৃথিবীর বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বেসরকারি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে। উল্লেখ্য CIA, FBI এবং Sony এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে। তারা বিভিন্ন কর্পোরেশন, ব্যাংক এবং এজেন্সীর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি।

 যেভাবে ধরা পড়েছিলো মুনসেগার: মুনসেগার সবসময় তার দলের নেতৃত্ব দিতো। তার ছদ্মনাম ছিলো সাবু। এই নামেই সে পরিচিত ছিলো। তাকে যখন গ্রেফতার করা হয় সে নিউইয়র্কের লোয়ার ইস্ট সাইডে অবস্থান করছিলো। দুই সন্তানের পিতা বেকার এই যুবককে কর্তৃপক্ষ ওখান থেকেই গ্রেফতার করে। মুনসেগার ধরা পড়েছিলো নিজের ছোট্ট একটি ভুলের কারণে। নিজের আইপিকে মাস্কিং না করেই একটি চ্যাট রুমে লগ ইন করে সে। যা তৎক্ষণাত কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এতে তার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য এবং অবস্থান ফাঁস হয়ে যায়। এই সুযোগে বিপক্ষ দলের এক হ্যাকার মুনসেগারের অনলাইন আইডেনটিটি প্রকাশ করে দেয়। কর্তৃপক্ষ তাকে ধরতে আর দেরি করেনি।
গ্রেফতার হওয়ার আগে মুনসেগার হার্ডড্রাইভের সব ডাটা ধ্বংস করে দেয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তাকে অভিযুক্ত করা হয় হ্যাকিং এর পরিকল্পনার জন্য। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যায়নি।
আদালত মুনসেগারেরকে তিনটি হ্যাকিং গ্রুপের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করে। এগুলো হলো- এ্যানোনিমাস, ইন্টারনেট ফেড এবং লুজসেক। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সাইবার আক্রমনের সাথে জড়িত।
এ্যানোনিমাসের সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয় যে,  ভিসা, মাস্টার কার্ড, পেপ্যল এবং সরকারি কিছু সংস্থার কম্পিউটারে আক্রমন করা হয়েছে। দেশগুলো হলো- তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, ইয়েমেন এবং জিম্বাবুয়ে। তাকে ডিসেম্বর ২০১০ থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত এ্যানোনিমাসের সক্রিয় সদস্য হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ফেডের সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে এইচ.বি গেরি নামক প্রাইভেট সিকিউরিটি ফার্ম এবং ফক্স ব্রডকাস্টিং এর ওয়েবসাইট হ্যাক করার অভিযোগ আনা হয়।

লুজসেকের সদস্য হিসেবে তার বিরুদ্ধে সনি,  পি.বি.এস,  ইউ.এস সিনেট এবং অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করার অভিযোগ আনা হয়।
এই অভিযোগগুলোথেকে জামিন নিতে মুনসেগার ৫০,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। তার সাথে বাকি অভিযুক্তরা হলো- গ্রেট ব্রিটেনের রায়ান একরয়েড এবং জ্যাক ডেভিস, আয়ার‌ল্যান্ডের ডেমিন মার্টিন এবং ডোনকা ও’সিয়ারভেইল। ডেভিস এবং মার্টিনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিলো। গত মার্চে বাকি দুজনকেও গ্রেফতার করা হয়।


















ফক্স নিউজ দাবি করে, দলের বাকি সদস্যের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মুনসেগার গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কর্তৃপক্ষের কাছে লুজসেকের গোপন তথ্য সরবরাহ করেছে। তা ছাড়া বাকি  সদস্যদের ধরা সম্ভব হতো না।
মুনসেগার তার টুইটার ফলোয়ারদের সর্বশেষ টুইট করে, !কিছু সংখ্যক কাপুরুষ দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এদের কাছে নতি স্বীকার করো না। লড়াই চালিয়ে যাও। অনড় থাকো।!!
২০১১ এর আগষ্টে প্রকাশ হলো যে, এ্যানোনিমাস আমেরিকার ৭০ টি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করে। যার মধ্যে বেশির ভাগ ছিলো মিসৌরির স্থানীয় পুলিশ বিভাগের ওয়েবসাইট। এই হ্যাকিং ঘটনাটি মুনসেগার গ্রেপ্তার হওয়ার চার সপ্তাহ পূর্বে। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এফবিআই তারই সহযোগীতায় উক্ত ওয়েবসাইটগুলো মেরামত করতে সক্ষম হয়।







ছদ্মনামে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সাবু (মুনসেগার):  এফবিআই সারা বিশ্বের ৩০০ আর্থিক, কর্পোরেট ও  সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এই বিষয়ে সর্তক করে দিলো যে, তারা যেন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়েব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে। কারণ তখন সাবুর ক্ষমতা গল্প আকারে সবার নিকট ছড়িয়ে পড়েছিলো। এবং সাবু নামটি প্রসিদ্ধি লাভ করে। ফক্স নিউজকে নিউইয়র্কের এক হ্যাকার জানায়, সাবু একজন রকস্টার হয়ে গিয়েছিলো। সকল মেয়েরা সাবু সাবু সাবু বলে চিৎকার করতো। এবং সাবু সম্পর্কে আলোচনা করতে তারা পছন্দ করতো।

ব্যারেট ব্রাউন নামের সাবেক এক বিখ্যাত সাংবাদিক এ্যানোনিমাসের সাথে বেশ ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলে। তিনি জানান, সাবুর এই বিশ্বাসঘাতকতা দলের মারাত্বক ক্ষতি করেছে। তিনি সংবাদ সংস্থাকে জানান, সে একজন দলনেতা ছিলো। তাই তার কাছে লোকজন বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আসতো। ঈশ্বরই জানেন, সে তাদেরকে আর অন্য কি কি বলেছে।
গ্রেফতারকৃত এ্যানোনিমাসের সদস্য জেরি হেমন্ডের নামে এই অভিযোগ আনা হয় যে, সে স্ট্রাফর সিকিউরিটি ইনটিলিজেন্স এর ২০০ জিবি পরিমাণ ইমেইল হ্যাক করে যা পরবর্তীতে উইকিলিকসে ফাঁস হয়।
ফক্স সোর্সের দাবি হেমন্ড এ্যানোনিমাসের সদস্য। হেমন্ডকে সতন্ত্র অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। লুজসেকের মুখপাত্র হিসেবে খ্যাত, ১৮ বছর বয়সি জ্যাক ডেভিসকে স্কটল্যান্ড হতে জুলাইয়ে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধেও নিউইয়র্কের আদালতে অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকী থাকলো আর একজন। রায়ান ক্লারি নামের এই সদস্যকে জুন মাসে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে উক্ত হ্যাকিং গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।





এ্যানোনিমাস এবং লুজসেক : এ্যানোনিমাস হলো ইন্টারনেট কালচারের একটি পৃষ্ঠপোষক গ্রুপ । যারা ইন্টারনেটে হ্যাকিং বিষয়ক, এন্টি-সেন্সর বিষয়ক এবং স্বাধীন মত প্রকাশ করে।
তারা আক্রমন করেছে ভিসা, মাষ্টার কার্ড, পেপ্যাল এবং এমাজনের মতো প্র্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারে। এমনকি তারা ফেসবুক এবং টুইটারকে সার্ভার দখলের হুমকি দিয়েছে। যদিও তারা এর সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয়। গ্রুপটি কম পরিচিতি পাওয়া লুজসেকের সাথে সম্পর্কিত।
লুজসেক, (LulzSec) যার পূর্ণরূপ (Lulz Security) । এটি এ্যানোনিমাসের একটি শাখা গ্রুপ। এদের কিছু সদস্য সরাসরি এ্যানোনিমাসের এবং লুজসেকের সাথে সম্পর্কিত। লুজসেক হলো সেরা কম্পিউটার হ্যাকিং গ্রুপদের একটি। যারা নামী-দামী সার্ভারে হ্যাকিং করার ক্ষমতাসম্পন্ন বলে দাবি করে। তাদের সবচেয়ে বড় আক্রমণ ছিলো, সনি পিকচারের সার্ভার নষ্ট করে দেয়া এবং সি আই এ এর সার্ভারকে অফলাইনে পাঠিয়ৈ দেওয়া। তারা ফক্স.কম এর সার্ভারে আক্রমন করে সাত হাজারেরও বেশি এক্স ফেক্টর প্রতিযোগীর নাম প্র্রকাশ করে দেয়। এবং পিবিএস নিউশুট ওয়েবসাইটে আক্রমন করেছে। সেখানে তারা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে টুপাক নামের এক কিলারের নিউজিল্যান্ড বসবাস করার ঘটনা ফাঁস করে দেয়। যা মিডিয়া জগতে তোলপাড় শুরু করে।
এই গ্রুপটির লক্ষ্য হলো, পৃথিবীতে দাঙ্গা হাঙ্গামার কারণ খুজে বের করা এবং সিকউরিটি এন্ড পাসওয়ার্ড সিস্টেমের খুত বের করা।









Unknown

Unknown

No comments:

Post a Comment

Thanks for ur comments

Powered by Blogger.